আমার শিল্পের যাত্রা কোনও পালিয়ে যাওয়া ছিল না —
বরং ছিল এক ফিরে আসা।
নিজের কাছে, নিজের সংস্কৃতির কাছে, এবং এমন এক কিছুর কাছে যা শব্দের চেয়েও পুরনো।
এই যাত্রা শুরু হয়েছিল কৃষ্ণকলি ভুঁইয়া ম্যামের হাত ধরে —
আমার প্রথম গুরু।
তিনি ধৈর্য আর মমতায় আমার কাঁচা হাতে প্রাণ এনে দিয়েছিলেন।
তাঁর অনুপ্রেরণাতেই আমি ভর্তি হই ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট-এ।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা শুধুমাত্র এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয় —
এটি বাংলার শিল্প আন্দোলনের এক বাতিঘর।
ঔপনিবেশিক যুগে ভারতীয় ঘরানাকে নতুন প্রাণ দেওয়ার জন্য এটি তৈরি হয়েছিল,
আর সেখানেই আমি শিখেছি শরীরের গঠন, রিয়েলিজম, অ্যানাটমি —
পাশাপাশি ভারতীয় রীতির ভাব ও সৌন্দর্যবোধ।
এই জায়গাটিই গড়ে দিয়েছিল আমার মাটির ভিত —
লাইন ধরে লাইন, চিন্তা ধরে চিন্তা।
আজও আমি শিখে চলেছি —
আমার গুরু কৃষ্ণকলি ম্যাম এবং
জহর স্যার-এর সঙ্গে,
যাঁর শিল্প দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছেও সম্মান পেয়েছে।
তাঁদের সবচেয়ে বড় শিক্ষা ছিল:
"যতদূরই যাও, নিজেকে শিক্ষার্থী রেখো।"
আমার পথ পরে ঘুরে গেল —
ক্যানভাস থেকে ত্বকে,
গ্যালারি থেকে স্টুডিওতে,
ঐতিহ্য থেকে ট্যাটু শিল্পে।
Dark Matter Tattoos-এ যোগ দেওয়ার আগে আমি বহু স্টুডিওতে কাজ করেছি,
প্রতিটি থেকে কিছু শিখেছি, নিজের স্টাইল তৈরি করেছি।
কিন্তু সত্যিকারের দক্ষতা পেলাম প্যাট্রিক দা-এর কাছে,
যিনি আমাকে শিখিয়েছেন—
ত্বক পড়তে, ক্লায়েন্টের মনের কথা শুনতে,
এবং শুধুই ডিজাইন নয়, এক গভীর অর্থ খোদাই করতে।
আজ আমি বহুরূপী:
🔸 এক চিত্রশিল্পী — বাংলার মাটিতে বেড়ে ওঠা
🔸 এক মিউরাল আর্টিস্ট — দেওয়ালে ভাষা আনা যার কাজ
🔸 এক ট্যাটু শিল্পী — যিনি আবেগকে কালি দিয়ে আঁকেন
🔸 এক শিক্ষার্থী — যিনি এখনো গুরুদের পাশে বসে
🔸 এক বাইকার, এক পথিক, এক গল্প বলা শিল্পী
🔸 এক কনটেন্ট ক্রিয়েটর — সোশ্যাল মিডিয়ায় সত্য তুলে ধরেন
কিন্তু যেই যন্ত্রই থাকুক হাতে —
তুলি, ট্যাটু মেশিন, ক্যামেরা বা কলম —
সব শুরু হয়েছিল "দেখতে শেখা"-র পাঠ দিয়ে।
আর এখনো চলেছে সেই অঙ্গীকারে —
"চলার পথে শিখে যেতে হবে প্রতিদিন।"
– রাজা তিরকি